ডিসেম্বর-২০১৯ চীনে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস নিয়ে জানেননা এমন লোক খোঁজে পাওয়া দায়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে পেনডেমিক বা বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা কছেন।কেউ বলছেন এটি প্রাণি থেকে মানুষে ছড়িয়েছে আবার কেউ বলছেন এটি চীনের তৈরি একটি জীবাণুাস্ত্র।সারা বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে নেতৃত্ব দেবার আশায় চীন এই ভয়ংকর ভাইরাসটি তৈরি করছেন।ইতিমধ্যে বিশ্বের ২০৯ টি রাষ্ট্রে ছড়িয়েছে রোগটি।এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে আশি হাজারেরও বেশি মানুষ।এখনো ফলফ্রসু কোন ঔষধ আবিস্কৃত না হওয়ায় মিথ্যা তথ্যে ভরা মুখরোচক খবরের ছড়াছড়ি সর্বত্রই।অবাধ তথ্য প্রবাহের এই যুগে কোন কিছু যেমন গোপন থাকেনা তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে ভুলতথ্যের বেশ রমরমা অবস্থা। প্রথমত কোন দেশে কত লোক আক্রান্ত হল,কত লোক মারা গেল আর কত লোকের মৃত্যু সংশ্লিষ্ট দেশের সরকার গোপন করল তা নিয়ে যে যার মত করে তথ্য ছড়াচ্ছে পাশাপাশি এখন শুরু হয়েগেছে কোন দেশ কি ঔষধ ব্যবহারে সুফল পেয়েছে তা নিয়েও বেশ সরগরম তথ্য প্রবাহ।কেউ বলছেন ভেষজ ঔষধে বেশ ভালো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে আবার কেউ বলছেন গরম পানির বাষ্প কিংবা চা’তে বেশি উপকারিতা রয়েছে।কেউ কেউ আবার ওযা বৈদ্যের প্রচারণাও চালাচ্ছেন বেশ জোরেশোরে। এতে আমাদের মত সরলমনা লোকজন বেশ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আছি।বুঝতে পারছিনা কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক।তবে আমরা সবাই বাচঁতে চাই;ফলে যে যাই বলছেন কিছুটা হলেও তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছি। ফলে সারাদিন আমরা আমাদের দৈন্দিন কাজকর্ম যেমন ঠিকভাবে করতে পারছিনা তেমনি দুশ্চিন্তার কারণে ভালোভাবে ঘুম খাওয়া দাওয়া কিছুই হচ্ছেনা।এতে করে আমাদের শরীর দিন দিন রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পড়ছে।কারো কারো শরীরে আগে থেকে লুকিয়ে থাকা ননকমিউনিকেবল ডিজিজগুলো ক্ষেত্র বিশেষে ইতিমধ্যে মাথাছড়া দিয়ে উঠছে।যা করোনা ভাইরাস আক্রমনের জন্য বেশ উপযোগী। ডাব্লিউএইচও এর নির্দেশনা হল সারাদিন অসমর্থিত সূত্র থেকে খবর না শোনে নির্ভরযোগ্য সূত্রে দিনে কেবল এক দুইবার করোনা সংবাদ শোনা বাঞ্ছনীয়।পাশাপাশি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত থাকার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।এতে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকে।কিন্তু আমরা প্রতি নিয়ত ভুলভাল সংবাদ প্রবাহে (ইনফোডেমিক) গা ভাসাতে গিয়ে নিজেদের যে পরিমাণ মানসিক চাপে রাখছি তা অনেকাংশে করোনা ভাইরাসের আসন্ন অনুমেয় ক্ষতির চেয়ে কম হবে বলে অন্তত আমার মনে হয়না।আশা রাখতে হয় ভালোর জন্য আর প্রস্তুত থাকতে হয় খারাপের জন্য।অর্থ্যাৎ আপদকালীন পূর্ব প্রস্তুতি থাকলে ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।তাই বলে ভুল তথ্য বিশ্বাস জম্মিয়ে অযথা মানসিক রোগ তৈরির মত অবস্থা তৈরি করা যাবেনা।এতে চুলকিয়ে ক্ষত তৈরি করে আবার তার চিকিৎসা করানোর নামান্তর হবে।হিতে বিপরীত হবে।আঞ্চলিক প্রবাদ আছে বনের বাঘে খাওয়ার আগে মনের বাঘে খাওয়া অর্থ্যাৎ প্রকৃত দূর্ঘটনা ঘটার আগেই দূর্ঘটনার আশংকায় সাহস হারানো।মনের জোর বড় জোর।মানসিকভাবে দৃঢ় লোকেরা অনেক প্রকারের রোগ থেকে বেঁচে যাওয়ার রেকর্ড পাওয়া যায়।ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া যেকোন তথ্য যাচাই না করে অযথা টেনশন বাড়ানো কোনভাবেই সমীচীন হবেনা।এতে দেশের সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে সাংবাদিক বন্ধুরা অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পারেন। এটি কেবল বাংলাদেশের একার সমস্যা নয় বরং বৈশ্বিক সমস্যা তা নিয়ে বিশ্বস্ত সূত্র হিসাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ গুরুদায়িত্ব পালন করছেন।আমাদের ঐ সূত্রগুলোতে বিশ্বাস রাখা উচিত। অন্যতায় “পেনডেমিক” করোনা ভাইরাস এর চেয়ে ভুলতথ্য প্রবাহ অর্থ্যাৎ “ইনফোডেমিক” এ আক্রান্ত হয়ে আমরা মরার আগেই সাহস হারিয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর কবলে পতিত হব।ভারতের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ও বিশ্বখ্যাত পরমাণু বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালাম বলেছেন “ভিন্নভাবে চিন্তা করার ও উদ্ভাবনের সাহস থাকতে হবে, অপরিচিত পথে চলার ও অসম্ভব জিনিস আবিষ্কারের সাহস থাকতে হবে এবং সমস্যাকে জয় করে সফল হতে হবে। এ সকল মহানগুণের দ্বারা তরুণদের চালিত হতে হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি এই আমার বার্তা।” কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করব “ভয় এবং কৌতূহল বোধ হয় পাশাপাশি চলে। প্রচন্ড ভীত মানুষের কৌতূহলও হয় প্রচন্ড। এরা জানালার শিক ধরে দাঁড়িয়েছে। দেখতে চেষ্টা করছে কী হচ্ছে বাইরে। কেউ কেউ চলে এসেছে বারান্দায়। চোখের সামনে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ দেখার আলাদা মাদকতা আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে একধরনের ঘোর তৈরি হয়। মাথার ভেতরে জগাখিচুড়ির মত কিছু হয়। তখন মানুষ যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না এমন কান্ড করে”। ভুল তথ্যের মহামারী থেকে বাঁচার জন্য নিজের অভ্যাস বদলানোর বিকল্প নেই।নিশ্চয়ই এর জন্য কোন দেশ লকডাউন করা হবেনা।প্রবল মানসিক শক্তি নিয়ে অদৃশ্য এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করে আমাদের বাঁচতে হবে।সামিজক দূরত্ব কেবল পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য নয় বরং চলমান মহামারী থেকে বাঁচার জন্য বজায় রাখুন।বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে গিয়ে নিজকে এবং আপনার পরিবারকে ঝুঁকিতে ফেলবেননা।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল
মানবিক ও উন্নয়ন কর্মী,
শেড।
ইমেলঃ [email protected]
পাঠকের মতামত